বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকা
পাখি আমাদের দেশের একটি অমূল্য সম্পদ। যা আমাদের অনেক খাদ্য চাহিদা মেটাতেও সাহায্য করে থাকে। বাংলাদেশের পাখির তুলনায় বলতে গেলে অনেক পাখিই রয়েছে। বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকায় যে পাখিগুলো আমার কাছে বিশ্বের সেরা মনে হয়েছে।
.
ভূমিকা
পাখি আমরা অনেকেই দেখে থাকি কিন্তু কোন পাখিগুলো আমাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে থাকে এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। আজকে আমি আপনাদের জানাবো বাংলাদেশের ১০ টি পাখির নামের তালিকা কোন কোন পাখিগুলো বেশি প্রয়োজনীয়। এর সাথে আরও জানতে পারবেন বাংলাদেশের অতিথি পাখির নামের তালিকা, পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা, পরিযায়ী পাখির নাম ও কোন সময় দেখা যায় ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকা কোন পাখি প্রয়োজনীয় বেশি
দোয়েল: বাংলাদেশের সর্বোত্তম এবং জাতীয় পাখি দোয়েল। যা আমরা সেই ছোটকাল থেকেই বইয়ে পড়ে এসেছি। দোয়েল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে (Copsychus saularis) দোয়েল পাখির গায়ের রং কালো। দুয়েলের উপরের অংশ কালো, পেটের নিচে সাদা, লেজের নিচেও সাদা, ঠোঁট এবং চোখ কালো, পা দুইটি ও কালো।
দোয়েল পাখির বাসস্থান পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, এশিয়াই মূলত এদের দেখা মিলে। এদের গ্রামের এলাকায় বা ফসলের মাঠে দেখা যায়। এরা মানুষের কাছাকাছি থাকতে বেশি পছন্দ করে। এরা গাছের ডালে বসবাস করে থাকে।
দোয়েল পাখি ১৫ - ১৮ সেন্টিমিটার এবং ৬ - ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। দোয়েল পাখি বিভিন্ন ধরনের সুরে ডাকার জন্য অনেকের কাছেই পরিচিত। এরা লাফিয়ে লাফিয়ে বিভিন্ন ফসল থেকে কীটপতঙ্গ সহ পোকামাকড় খাদ্য হিসাবে খেয়ে থাকে। তবে যত দিন যাচ্ছে এই পাখির সংখ্যা তত কমে যাচ্ছে।
ময়না পাখি: ময়না পাখি সাধারণত অনেক রকমেরই হয়ে থাকে। পাতি ময়নার বৈজ্ঞানিক নাম (Gracula religiosa) এর নামের অর্থ পবিত্র পাতি কাক। বিগত কয়েক বছর ধরে এদের দেখা আর আগের মত যায়না। এরা ভারতে, চিনে, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভুটান, বাংলাদেশ সহ অনেক দেশের এদের অবস্থান রয়েছে। এরা ঘন বনে থাকতে বেশি পছন্দ করে।
এরা খাদ্য হিসেবে রসালো ফল বেশি পছন্দ করে থাকে যেমন কমলা, আনারস, মৌমাছি, ফুলের মধু, চেরি ফল পোকামাকড়সহ ইত্যাদি। আমরা অনেকেই আছি শখের বসে বাড়িতে ময়না লালন পালন করে থাকি। এরা সাধারণত আইরন মুক্ত খাবার বা পানি খেয়ে থাকে। আছে গাছের ডালে দল বেধে বসে ডাকাডাকি করে থাকে তিক্ষণ সুরে চিৎকার করে তাই এদের সুর টা অনেকেরই মনে থাকে।
শালিক পাখি: আমাদের সুপরিচিত একটি পাখি শালিক। এটা গ্রাম্য অঞ্চলের বেশি দেখা যায়। শালিক পাখি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন চিত্রা শালিক, ভাত শালিক, গো শালিক, কাঠ শালিক ইত্যাদি। শালিক পাখি এই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। শালিক ময়নার মতোই কথা বলতে পারে।
শালিক পাখির খাদ্য হিসেবে ফুলের মধু, কেঁচো, ঘাসফড়িং, নরম জাতীয় ফল মূল, বিভিন্ন কীটপতঙ্গ খেতে পছন্দ করে। আপনি যদি শালিক পাখি বাসায় লালন পালন করতে চান তাহলে বাজার থেকে সরিষার দানা, লাল শাখের বীজ, সূর্যমুখী ফুলের বীজ ইত্যাদি কয় করে খাওয়াতে পারেন৷ শালিক পাখি তিন থেকে পাঁচটি ডিম দিয়ে থাকে একসাথে তবে এটি কখনো কুম ও হতে পারে আবার বেশিও।
আপনি যদি মানুষের মতো শালিক পাখিকে ও কথা বলাতে চান তাহলে অবশ্যই প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবে মানুষের মত কথা বলার জন্য কাঠে শালিকি ভালো। শালিক পাখির সাথে দিনে ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট কথা বলুন এতে করে মানুষের মাথায় কথা বলতে পারে।
আরও পড়ুন : চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪
বাবুই পাখি: বাবুই পাখি আমাদের বিশ্বের মধ্যেই একটি অন্যতম পাখি বলেই মনে হয়। এই পাখি আগে মত অনেক দেখা গেলেও এখন আর আগের মত অতটাও দেখা যায় না। দিন দিন এর দেখা যেন কমেই আসছে। কারণ চারিদিকে গাছপালা কেটে বড় বড় বিল্ডিং বাড়ি, কলকারখানা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরি করার কারণে এ পাখির সংখ্যা কমছে।
এরা বিভিন্ন গাছের ডালে লতা পাতা খড় দিয়ে কলসির মতো ঘর বানিয়ে থাকতো। তবে এরা বেশিরভাগ তালগাছ গাছ, ডাবের গাছ, খেজুরের গাছেই বেশি থাকত। এরা খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন কীট পতঙ্গই খেয়ে থাকে।
কোকিক পাখির: আমাদের বাংলাদেশের পাখিদের মধ্যে কোকিল পাখি একটি সুপরিচিত। যার কণ্ঠের সুরটা আমরা সবাই শুনেছি। কোকিল পাখি মাঝারি সাইজের হয়ে থাকে। এদের গ্রাম অঞ্চলেই বেশি দেখা যায় ভোরবেলায় এরা কুহু কুহু সুরে গান গেয়ে থাকে। যার গান শুনে আমাদের অনেকেরই সকালে ঘুম ভেঙে যায়। কোকিল পাখি গাছের ডালে বসবাস করে থাকে। এরা খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন পোকামাকড় এবং ফসলে থাকা কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে।
কবুতর পাখি: কবিতার পাখি আমরা চিনি না এমন হয়তো কেউ নেই। কবিতার আমরা অনেকেই বাড়িতে লালন পালন করে থাকি। কবিতার বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে। কবিতার আমরা খাওয়ার জন্যও অনেকই বাসায় লালিত-পালিত করে থাকি বেশির ভাগ। বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকায় কবিতর কথাটি না বললেই নয়।
কারণ কবিতরের মাংস পছন্দনীয় একটি খাবার। যা আমাদের শরীরের রক্ত জনিত সমস্যা এবং বিভিন্ন সমস্যায় এই মাংস খেতে হয়। অন্য মাংসের থেকে কবিতরে মাংসের স্বাধ অনেক বেশি। এই বিশ্বে ২০০ টি প্রজাতির কবিতর রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে ৩০ টি কবুতর রয়েছে। এদের গায়ের রং অনেকেরই অনেক রকমেরই হয়ে থাকে।
টিয়া পাখি: আমরা সেই ছোটকাল থেকেই বইয়ে দেখে এসেছি বা নিজেরাও একে এসেছি টিয়া পাখির ছবি। টিয়া পাখিটি অনেকেই শখ করে বাসায় খাচাই করে পালন করে থাকে। এদের গায়ের রং দেখতে টিয়া কালারের হয়ে থাকে। তবে টিয়া পাখিরও অনেক রকমের প্রজাতি রয়েছে যাদের দেখতে একটু লালচে সবুজের মত হতে পারে।
এরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আনাচে-কানাচেই রয়েছে। এদের দেখতে একটু লম্বা হয়ে থাকে। টিয়া পাখি যেন সব পাখির থেকে সৌন্দর্যের দিক থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ এদের গায়ের রংটা দেখে অনেকেরই ভালো লাগে।
কোয়েল পাখি: বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকা রয়েছে সেরা পাখির মধ্যে কোয়েল।কোয়েল পাখি আমরা চিনি না এমন হয়তো কেউ নেই। বাংলাদেশের সব পাখির থেকে কোয়েল একটি অন্যতম পাখি। যা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি আমাদের খাদ্য চাহিদা ও পূর্ণ করে থাকে। কোয়েল পাখি মাংস এবং ডিমের অনেকটাই ক্যালসিয়াম ভিটামিন থেকে থাকে।
কোয়েল পাখি দেখতে সাধারণত ছোট সাই জর হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে অনেকে খামারেও চাষ করে যাচ্ছেন এই কোয়েল পাখি। কোয়েল পাখির আবার অনেকে খামার দিয়েছেন ডিমের কারণে। কারন ডিম বেঁচেও অনেকেই লাভবান হয়েছেন।
চড়ই পাখি: চড়ুই গ্রাম এলাকায় আশেপাশে একটি সুপরিচিত পাখি। চড়ই বা চড়াই দুটি নামেই পরিচিত। তবে এরা গ্রাম্য এলাকা থেকে শুরু করে জনবস্তিতে থাকতে বেশি ভালোবাসে। এরা শুকনো লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। গভীর জঙ্গলে বা গাছের আড়ালে এরা বাসা বাঁধে থাকে। এদের অবস্থান সাধারণত জাপান, ভুটান, মালয়েশিয়া, ইন্দেশিয়া, চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কুড়িয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড সহ অনেক দেশ-বিদেশেই এদের দেখা যায়।
১৫ সেন্টিমিটার এদের দেহের দৈর্ঘ্য। ওজন প্রায় ২০- ২৫ গ্রাম হয়ে থাকে। এরা ৬- ৭ টি ডিম দিয়ে থাকে। এদের বাচ্চা ফুটাতে ১৩ দিন সময় লাগে প্রায়। বাংলাদেশের দুই ধরনের চড়ই প্রজাতি রয়েছে যেমন পাতি চড়ই এবং গেছো চড়ই। এরা খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন ফুলের বীজ, সরিষার দানা সহ ছোট বীজ বা দানা খেয়ে থাকে।
বুলবুলি পাখি: আমাদের অতি সুপরিচিত একটি পাখি বুলবুলি। যার গায়ের রং হয়ে থাকে বাদামী। এদের মাথায় কালো ঝুঁটি দেখে সহজেই চেনা যায়। এরা খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন পোকামাকড় ফুলের মধু, ফুলের পাপড়ি, ফলও খেয়ে থাকে। এদের শহরে গ্রামে এবং নদীর তীরে গাছের ঝাঁপ ঝোপে বাসা বাঁধানো দেখা যায়। বুলবুলি পাখি বিভিন্ন সুরে ডাকাডাকি করে থাকে।
বাংলাদেশের পাখির নামের তালিকা
আমরা বাংলাদেশে থাকলেও অনেকেই অনেক পাখির নাম জানিনা বা আমাদের দেশে কি কি পাখি রয়েছে তাও আমরা সঠিক জানিনা। আজকে আমি আপনাদের জানাবো আমাদের বাংলাদেশে কি কি পাখি রয়েছে। বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকা থেকে শুরু করে সকল পাখির নাম বলার চেষ্টা করব তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে কিছু পাখি গুলোর নাম জেনে নেওয়া যাক।
দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়া, পায়রা, বুলবুলি, বউ কথা কও, কাঠঠোকরা, মাছরাঙ্গা, বাবুই, শালিক, টুনটুনি, চড়ই, ঘুঘু, কাকাতোয়া, বক, মৌটুসি, মথুরা, হুদহুদ, জল ময়ূর, কালেম, ধনেশ, শকুন, নীল কান্ত, কুবো, রাঙ্গা চাঙ্গা, টিকিপানচিল, হুতোমপ্যাচা, পেঁচা, কালো ফিঙ্গে, তিতির, ঈগল, পরীযায়ি পাখি ইত্যাদি ছাড়াও আমাদের দেশে আরো অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে।
পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা
পরিযায়ী পাখির নামের তালিকায় যে পাখিগুলো রয়েছে তার নাম নিচে উল্লেখ্য করা হলো
- দাগি রাজহাস
- লাল ঘুঘু
- কালো হাস
- কালাপাশ চুটকি
- চিএা শালিক
- ফুলুরি হাস
- পান্না কোকিল
- উদয়ী মানিকজোর
- নিশি বক
- বড় সারলী
- কোয়েল
- পাতি হাস
- বালি হাস
- পোষা হাস
- জাক কবুতর
- কসাই পাখি
পরিযায়ী পাখির নাম ও কোন সময় দেখা যায় অতিথি
বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকা থেকে আলাদা রয়েছে এই পরিযায়ী পাখি। পরিযায়ী পাখি বলতে যে পাখিগুলোকে বছরের মধ্যে একবার দেখা যায়। অর্থাৎ বছরের যে ছয়টি ঋতু আসে এই ছয়টি ঋতুর মধ্যে একটি ঋতুতে এই পরিযায়ী পাখি গুলো দেখা যায়। পরিযায়ি পাখিগুলো ঝাঁক ধরে এসে নদীর তীরে অথবা বিলে পড়তে দেখা যায়।
বছরের মধ্যে এই পাখিটি একবার আসে বলে এই পাখিটির নাম অনেকে অতিথি পাখি বলে চিনে। অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখির মধ্যে রয়েছে বালিহাসঁ, দাগি হাসঁ, ফুলুরি হাস ইত্যাদি। এক কথায় বছরে যে ছয়টি ঋতু আসে এই ছয়টি ঋতুর ভিতরে যেই পাখি গুলো অনেক দূর থেকে এক ঝাক বেধে আসে সেই পাখিগুলোর সাথে আরো যেই অন্যান্য পাখি অংশগ্রহণ নেই তাদেরকেও পরিযায়ী পাখি বলা হয়। পরিযায়ী পাখি বলার কারণ এরা বছরে একবারি ঝাঁক বেঁধে আসে।
লেখ মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা বাংলাদেশের ১০ টি পাখির ছবি ও নামের তালিকা য় যে পাখিগুলো বেশি জনপ্রিয়। তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি বলার চেষ্টা করেছি। আমরা অনেকেই আছি আমাদের দেশে কি কি পাখি রয়েছে পাখিগুলোর নাম কি আমরা জানিনা।
আমি সেইসব তথ্য সম্পকে উপরে বলে এসেছি। আশা করছি এই পোস্টটি পড়ে আপনিও পাখিদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে গেছেন। আমার এই পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। নিত্যনতুন এবং সঠিক তথ্য পড়তে আমার ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ এই পোস্টটি সময় দিয়ে পড়ার জন্য।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url