খাবারের স্বাদ নিয়ে আসতে মসলা ব্যবহার করা হয়। এক রান্নার এক এক রকম মসলা হয়ে থাকে। মসলা ব্যবহার করা হয় রান্নাবান্নার জন্য থেকে শুরু করে আচারে ও মসলা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মসলার উপাদান এতোটাই অপরিহার্য যে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ কে অতুলনীয় করে তোলে। মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম এই নিয়ে আজকের বিস্তারিত।
ভূমিকা
মসলা শুধু রান্না বান্না আর আচারের জন্যই নয় এক মসলা এক এক উপাদান ঔষধি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মসলার গুনাগুন এতটাই বেশি যে দেশে এবং বিদেশে সব জায়গাতেই মসলার পরিচিতি। মসলা ছাড়া যেন রান্নাবান্না চলেই না। রান্নাতে মসলা দিলে খাবারের রং কেউ উন্নত করে তোলে। বিভিন্ন উৎস থেকেই মসলা তৈরি হয়ে থাকে।
যেমন গাছের পাতা, গাছের ছাল, গাছের বীজ, গাছের ফুল, গাছের ফল, গাছের কান্ড থেকে মসলা তৈরি করা হয়। মসলা বিভিন্ন রকম ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আজকে জানবো মসলা সম্পর্কে কিছু কথা। মূলত আজকের আর্টিকেলটি মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম এই নিয়েই লেখা। আপনারা যারা মসলা সঠিক ভাবে বাড়িতেই বানাতে চান।
কোন মসলা কোন রান্নার জন্য ব্যবহার করা বা গরুর মাংসের জন্যই কি মসলা মুরগির মাংসের জন্য কি মসলা বানাবেন বাড়িতে বসে অনাসেই এই সব কিছু আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। আজকের পোস্টে থাকছে জনপ্রিয় ১০ টি মসলার নাম, গরুর মসলার নাম এবং বাড়িতেই বানবেন যে ভাবে, বিভিন্ন মাংসের মসলার নাম ও বানানোর ঘরোয়া উপায়, দেশে এবং বিদেশে মসলার পরিচিতি ইত্যাদি।
জনপ্রিয় ১০ টি মসলার নাম
বাংলাদেশের প্রতিটা ঘরে রান্নাবান্নার কাজে জন্য সব থেকে জনপ্রিয় যে মসলাগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ মসলাগুলো গ্রাম অথবা শহরে সব জায়গায় চলে। রান্নাঘরে এই মসলাগুলো না থাকলে যেন বাঙালির রান্নাঘর মানাই না। আর এই মসলাগুলো মাছ-মাংস থেকে শুরু করে অনেক কাজেই ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। যেমন অনেকে চা বা আচারের সাথে ব্যবহার করেন।
তবে শুধু এই দেশেই যে মসলার চাহিদা আছে তা নয় বাহিরের দেশেও মসলার বাপক ভাবে চাহিদা ও পরিচিতি রয়েছে। মসলার স্বাদ এবং গন্ধে অতুলনীয়। যেই মসলা গুলো জমিতে চাষ করা হয়ে থাকে তার পাশ দিয়ে হেটে গেলে মসলার গন্ধে যেন মনটা ভরে যায়। মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম এই নিয়ে বলা যেতে পারে পৃথিবীতে মসলার সংখ্যা প্রায় ১০০ টিরও বেশি।
এখন পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি মসলা কত প্রকার হয়ে থাকে। কারণ এক এক দেশে এক এক মসলার এক এক নামে পরিচিত আবার ভিন্ন মসলা ও অনেকেই চাষ করে থাকে। যেগুলো আমরা হয়তো অনেকেই জানিও না। তাই নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি মসলার কত প্রকার। তবে ধারনা করা যায় ১০০ টিরও বেশি মসলার সংখ্যা। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক জনপ্রিয় ১০ টি মসলার নাম
জিরা: জিরা বাংলাদেশের অন্যতম একটি মসলা এটি রান্না বান্না থেকে শুরু করে যে কোন কাজেই ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয় জিরা। রান্না শেষ হওয়ার পর জিরা ভেজে নিয়ে গুঁড়ো করে রান্নার উপরে দিলে স্বাধ এবং গন্ধে অতুলনীয় হয়ে থাকে।
ধনেপাতা বা ধনের বীজ: শীতের সময় ধনেপাতা অনেকে জমিতে চাষ করে থাকে। আর বাড়ির পাশেই যদি ধনেপাতা কোন টবে লাগানো থাকে তাহলেই ব্যাচ। কারণ সকালে ধনেপাতার গন্ধে যেন পরিবেশটা অন্যরকম একটা হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনি রান্নায় ধনে পাতা দিলে রান্না গন্ধে বাড়ি টা যেন অন্যরকম হয়।
বিশেষ করে রাতে ধনেপাতা দিয়ে রান্না করে রাখলে ওই রান্না সকালে খেতে আরও বেশি টেস্টি লাগে। শীতকাল চলে গেলে ধনেপাতা ও চলে যায়। কিন্তু ধনে পাতার বীজ সারা বছর পাওয়া যায়। কেউ চাষ করে ঘরে সংরক্ষণ করে বা কেউ বাজার থেকে নিয়ে আসে। যার কারণে রান্নার কাজে ধনেপাতা বীজ ব্যাবহার করে থাকেন অনেকেই। ধনে পাতার বীজ ভেজে রান্নায় গুঁড়ো করে দিলে এর স্বাদ অতুলনীয় হয়ে থাকে।
এলার্চ: এলাচ দেশ অথবা বিদেশ রান্নার কাজে এটি ব্যাপক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এলাচ বাংলাদেশের থেকে বিদেশে বেশি চাষ হয় এবং বিদেশ থেকে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দিয়ে থাকে এলাচ। এলাচ বেশি ভাগ ক্ষেতরে পোলাও রান্না করতে বেশি ব্যাবহার করা হয়।
লবঙ্গ: লবঙ্গ ঔষধি কাজ থেকে শুরু করে রান্নাবান্না বা চায়ের বেশ ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত গায়ে জ্বর আসলে লবঙ্গ দিয়ে চা বানিয়ে বা লবঙ্গ দিয়ে পানি গরম করে খেয়ে থাকেন অনেকেই। লবঙ্গ শরীরের বিভিন্ন রোগ বালাই প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। লবঙ্গের ঔষধি কাজেও বেশ পরিচিতি রয়েছে।
দারচিনি: দারচিনি যে কোন মাংসে দিলে মাংসকে অতুলনীয় করে তোলে। অনেক মাংসের অনেক রকম গন্ধ হয়ে থাকে এই মাংসের গন্ধ সড়াতেই দারচিনি বেশ কাজ করে থাকে বা যে কোন রান্নার আসটে গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
কালো ফল: কালো ফল মাছ মাংস থেকে শুরু করে যে কোন রান্নায় মসলার সাথে বেটে দিলে এর স্বাধ যেনো অতুলনীয় করে তুলে এবং খাবার খেয়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়।
আদা: আদা সাধারণত বাংলাদেশে যেকোনো অঞ্চলেই কম বেশি চাষ হয়ে থাকে। আধা রান্নায় দিলে স্বাদে এবং গন্ধে অতুলনীয়। বিশ্বের সব মশলার মধ্যে অন্যতম একটি মসলা হচ্ছে আদা। আদার চাহিদা এবং এর গুণ অনেক বেশি। এটি ঔষধি কাজে ও ব্যবহার হয়ে থাকে বা শরীরের যেকোনো সমস্যা ও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রসুন: বাংলাদেশে আদার মতো রসুনও চাষ হয় থাকে ব্যাপকভাবে এটি যে কোন গ্রাম অঞ্চলেই চাষ হয়ে থাকে। এর চাহিদা গুলো অনেক বেশি। রান্নার কাজে রসুন বেটে রান্নায় দেন না এমন হয়তো কেউ নেই রসুন রান্নার প্রতিটা কাজেই লাগে।
মরিচ: মরিচ ছাড়া যেন বাঙালির চলে না। কোথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। ঠিক তেমনি ঝালেও বাঙালি। বাঙালি ঝাল খেতে বেশ পছন্দ করে তবে শুধু বাঙালি না এটি গ্রাম অঞ্চল থেকে শুরু করে বিশ্বের কম বেশি সবাই রান্নায় ব্যবহার করে থাকে। ঝাল ছাড়া যেন রান্না জমেই না। ঝালের উপরেই যেন রান্নার অন্যরকম একটা স্বাদ আসে।
হলুদ: রান্নার মধ্যে অন্যতম মসলা হচ্ছে হলুদ গুঁড়ো। হলুদের গুড়া ছাড়া যেন রান্নার রং হয় না। আর রান্নায় রং না হলে সেই জিনিস যেন চোখেই লাগে না কেমন জানি ফেকেসে লাগে। তবে এটি বাংলাদেশেই বেশি চাহিদা বিদেশে এর চাহিদা একটু কম।
মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম
মসলা বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। মসলার কোন প্রকারভেদ নেই তবে মূলত গাছের ছাল, ডাল, ফুল, ফল, বাকলা, থেকে মসলা তৈরি। করা হয়ে থাকে। কিছু মসলা রয়েছে যা রান্নার কাজ বাদেও ঔষধি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার কিছু মসলা রয়েছে যেগুলো ঘরোয়া উপায়ে ও রোগ বালাই সরাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যেমন আদা, কালেজিরা, হলুদ, লবঙ্গ, গোলমরিচ, ইত্যাদি।
তবে মসল্যায় যেমন ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ঠিক তেমন বেশি পরিমান মসলা রান্নায় দিলে রান্না মসলা মসলা গন্ধ করে। বেশি পরিমাণ মসলা দিয়ে রান্না করে শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়। এতে শিশুদের হজম শক্তি কম হতে পারে। কারণ হজম শক্তি শিশুদের দুর্বল থাকে। যাদের এলার্জি থাকে তাদেরও সতর্ক হতে হবে। কারণ মসলা খেলে গা চুলকাতে শুরু করবে তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিন এবং নিশ্চিত হয়ে মসলা ব্যবহার করুন।
মসলার নাম
আদা, এলাচ, কালো ফল, জয় ফল, জয়ন্তী, তেজপাতা, দারচিনি, রসুন, গোলমরিচ, হলুদ, জিরা, ধনিয়া, রানধুনি, পুদিনাপাতা, লবঙ্গ, সরিষা, মেথি, মৌরি, কালোজিরা, মরিচ গুঁড়ো, জাফরান, কারি পাতা, তারা, জোয়ান ইত্যাদি।
গরুর মাংসের মসলার নাম এবং বাড়িতেই বানাবেন যে ভাবে
মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম আমরা জানলেও এটা জানি না গরুর মাংসের মসলা বাড়িতে কি কি উপকরণ দিয়ে কিভাবে বানাতে হয়। গরুর মাংসের মসলা আমরা বাজারে কিনতে যাই। গরুর মাংস নিয়ে আসলে মাংস রান্না করার জন্য। কিন্তু আমরা একটা মসলা প্যাকেট নিয়ে আসলে একবারই ব্যবহার করতে পারি।
যদি এমন হয় আপনি নিজেই ঘরে থাকা কিছু মসলা উপকরণ দিয়ে গরুর মসলা করে নিলেন এবং কিছু মাসের জন্য সংরক্ষণ করেও রেখে দিলেন তাহলে ব্যাপার টা কেমন হয়। আমরা বাজার থেকে সাধারণত রাঁধুনি রেডিমিক্স মেহজাবিন গরুর মাংসের মসলা নিয়ে এসে থাকি। কিন্তু এই মসলা যদি আপনি ঘরে বানান তাহলে এটি অনেকদিন ভরায় ব্যবহার করতে পারবেন। তবে চলন জেনে নেওয়া যাক কি কি উপকরণ দিয়ে গরুর মাংসের মসলা তৈরি করবেন।
- এলাচ ৫ থেকে ১০ টি
- জয়ন্তী ৪ টা
- তারা বা স্টার ৪ টা
- দারচিনি ৫ থেকে ১০ টা
- গোলমরিচ ১০ থেকে ১৫ টা
- জিরা ২ চা চামচ
- পাচফরন ৪ চা চামচ
- জায়ফল ৫ টা
- ধনিয়া গুরো ২ চা চামচ
- সরিষা ৩ চা চামচ
- শুকনো মরিচ ১০ টা
- হলুদ গুড়া ২ চামচ
- তেজপাতা ৫ টা
এই উপকরণ গুলো দিয়ে আপনি অনায়াসেই গরুর মাংসের মসলার মতোই তৈরি করে নিতে পারবেন সারা বছর সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন ঘরে। এই উপকরণগুলো ভেজে নিয়ে ব্লেন্ডার করতে হবে। তাহলেই ব্যাস তৈরি হয়ে যাবে আপনার মেহজাবিন মসলা।
বিভিন্ন মাংসের মসলার নাম ও বানানোর ঘরোয়া উপায়
আমরা রান্নার কাজে বিভিন্ন মসলা ব্যবহার করে থাকলেও মাংস বা মাছের জন্য আলাদা মসলায় ব্যবহার করা হয়। কেননা
মাছ ও মাংস দুটি উপাদানই আলাদা সেক্ষেত্রে মসলা ও আলাদা হয়ে থাকে। মাছের ক্ষেত্রে রাধুনী মাছের মসলা আর গরুর মাংসের ক্ষেত্রে গরুর মেহজাবিন মাংসের মসলা ব্যাবহার করা হয়ে থাকে
আমরা উপরে জেনে এসেছি গরুর মাংসের মসলা কিভাবে বানানো হয় বাড়িতে ঘরোয়া উপায়। এখন আমরা জানবো মাছ রান্না করার জন্য যে মসলা প্রয়োজন হয় সেই মসলা ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে কিভাবে তৈরি করবেন। আমরা উপরে যেনে এসেছি মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম মসলার। তবে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মাছের মসলা কিভাবে তৈরি করবেন।
- মরিচ ৪ টা
- গোলমরিচ ৭ টা
- সরিষা ২ চা চামচ
- হলুদ গুরো ২ চামচ
- ধনিয়া ৩ চা চামচ
- জিরা ২ চা চামচ
- এলাচ ৩ থেকে ৪ টা
- কালোফল ৩ টা
- জয়ফল ২ টা
- তেজপাত ২ টা
- দারচিনি ২ টুকরো
এই উপকরণ ভালোভাবে ভেজে নিয়ে ব্লেন্ড করে একটা পাত্রে কয়েক মাসের জন্য সংগ্রহ করে রাখতে পারবেন। এটা মাছ ভাজি থেকে শুরু করে মাছের যেকোন রেসিপিতেই দিতে পারেন।
দেশে এবং বিদেশে মসলার পরিচিতি
মসলা খাবারের স্বাদ আনতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এটি যে শুধু দেশের ব্যবহার করা হয় তা না নয় এটি বিদেশে ও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা যেমন উপরে জেনে এসেছি মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম কি উপকরণ দিয়ে কোন মসলা তৈরি হয়?
ঠিক তেমন বাহিরের দেশেও এ মসলা গুলো তৈরি করা হয়ে থাকে মাংস এবং মাছের জন্য আলাদা। মূলত বাহিরের দেশ থেকে আরো বাংলাদেশ আনা হয় মসলা। বাংলাদেশের থেকে বাহিরের দেশেই মসলা চাষ বেশি হয়ে থাকে। এক এক মসলা একেক নামের জন্যেই পরিচিতি। কিছু কিছু মসলা রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
লেখ কের শেষ মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা' আজকে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের মাঝে মসলা কত প্রকার হয় ও কি কি নাম এই সম্পর্কে পোস্টটি তুলে ধরার। আশা করছি আপনাদের ও ভালো লাগবে এ পোস্টটি পড়ে। আর পোস্টটি পড়ে যদি ভালো লাগে অবশ্যই আমার নিয়ম এবং উপকরণ অনুযায়ী মসলা তৈরি করে দেখবেন।
আমার ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন পোস্ট পড়তে ভিজিট করে রাখুন। ধন্যবাদ সবাইকে এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত সময় দিয়ে পড়ার জন্য। আপনার কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে বলতে পারে। এরপর কি সম্পর্কে পোস্ট জানতে চাচ্ছেন সেটি নিচে কমেন্ট বক্সে বলবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url