ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা বুট টানা এক সপ্তাহ খেলে উপকার মিলে যেসব রোগে আপনারা যদি জানেন তাহলে আপনারাও চাইবেন আজকে থেকেই ছোলা বুট খাওয়ায়। ছোলা পুষ্টিক একটি জাতীয় শস্যদানা। 
ছোলা বুট পানিতে

তাছাড়াও ছোলা খেলে কি কি উপকারিতা মিলে ও ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক ছোলা বুটের উপকারিতা সম্পর্কে। 

.

টানা এক সপ্তাহ ছোলা বুট খেলে কি হয় 

ছোলাতে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ লবণ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, আমিষ, ফসফরাস, আইরন ইত্যাদি। ছোলা বিভিন্ন তরকারি এবং পোলার কাজও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছোলা প্রতিদিন রাতে ভিজিয়ে সকালে উঠে খোসা ছাড়িয়ে খেলে শরীরের আমিষ ও অ্যান্টিবায়েটিক পাওয়া যে থাকে। ছোলাতে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের বিভিন্ন রোগের সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষমতা রাখে। 
তাছাড়াও শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই ছোলা। পুষ্টিকর খাবার বলেই কিন্তু ইচ্ছা মতো খাওয়া যাবে না ছোলা। এক কাপ ছোলাতে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ৯ থেকে ১২ গ্রাম ভোজ্য আশ। ৩৪ থেকে ৪৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। তাই খাওয়ার সময় অবশ্যই পরিমাণ মেনেই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

ছোলা কাদের খাওয়া যাবেনা 

ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি ছোলা বুট আবার অনেকেরই খাওয়া যাবেনা কিন্তু আপনারা কি জানেন কাদের ছোলা খাওয়া থেকে বারণ করেন চিকিৎসকরা। কিডনির সমস্যা মতো রোগীদের ছোলা খাওয়া একেবারেই যাবে না। এই ছোলা খাওয়া থেকে কিডনি রোগীদের বিরত থাকতে বলেন ডাক্তারেরা। 

আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ছোলা পানিতে না ভিজিয়ে দ্রুত সিদ্ধ করে খেয়ে ফেলে যা শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। ছোলা কম বেশি না হলেও ৬ থেকে ৭ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে তারপরে সিদ্ধ করে খেতে হবে। তবে পানিতে ভেজানো ছোলা এবং ছোলার পানি শরীর স্বাস্থ্যের জন্য দুটোই উপকারী। তাছাড়াও ছোলা খেলে শরীর স্বাস্থ্যের অনেক রোগ ভালো হয়ে থাকে। 

ছোলা বুট খাওয়ার ৬ টি উপকারিতা 

ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি যে ছয়টি রোগ ভালো হয়ে থাকে। সেগুলো সম্পর্কে আপনারা যদি জানেন তাহলে আপনারাও এই নিয়ম গুলো ফলো করে রোগ গুলো ভালো করতে পারেন তাড়াতাড়ি। 
  • ১/ খাদ্যনালী ভালো রাখতে সাহায্য করে ছোলা। ছোলা শরীরে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমায়। ছোলা খেলে রক্তের শতকরা কমে যায় না সে ক্ষেত্রে এটি ডায়াবেটিসে রোগীদের জন্য একটি উপকারী খাবার। 
  • ২/ছোলা কফ ভালো করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আপনি যদি শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি অথবা কফ ভালো করতে চান তাহলে শুকনো ছোলা ভাজিয়ে খেতে পারেন। ছোলার শাক এবং ছোলা দুটোই খেতে পারেন এটি কষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। 
  • ৩/ রক্তের চর্বি কমাতে আদার সঙ্গে কাচা ছোলা ভিজিয়ে খেতে পারেন। কারণ কাঁচা ছোলা এবং আদা খেলে শরীরের আমিষ ও আন্টিবায়োটিকে চাহিদা পূরণ ব্যাপক কাজ করে থাকে। ছোলাতে থাকা ফ্ল্যাট শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
  • ৪/ হৃদপিন্ডের রোগ সরাতে ছোলা খেতে পারেন। অন্য দেশের গবেষকরা বলেছেন যে শরীরে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায় এবং হৃদপিণ্ড রোগ সরাতে কাজে আসে। এছাড়াও হৃদপিন্ডের রোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকারী এই ছোলা। 
  • ৫/ গ্লিসেমিক ও ইনডেক্সের পরিমাণ ছোলাতে কম থাকায় অস্থিরতা ভাব দূর করে থাকে। 
  • ৬/ ছোলা খেলে অল্পতেই হজম শক্তি হয়ে থাকে। তাছাড়াও স্বাস্থবান বানাতে সাহায্য করে। 

ছোলা বুট পানিতে ভিজে খাওয়ার উপকারিতা 

মাছ মাংস থেকেও আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেতে পারেন তাহলেই অনেক রকমের রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন। ভেজা ছোলা বুট বাদামের থেকেও কিন্তু বেশি উপকারী হয়ে থাকে। পানিতে ছোলা বুট ভিজে খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে একমুঠো ছোলা বোট একটা বাটিতে ছয় থেকে সাত ঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন। পরবর্তীতে এই বুট খেয়ে নিন। 

কাঁচা পানিতে ভেজানো এই ছোলা বুট খেলে পেট ব্যথা ভালো হওয়ার পাশাপাশি কষ্টকাঠিন্য এবং শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে। তবে আপনি যদি শুধু কাঁচা বুট এমনিই খেতে না পারেন তাহলে কিছুটা পরিমাণ আদা এবং বিট লবণের গুঁড়ো সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও কাঁচা ছোলা খেলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াবাড়ির পাশাপাশি হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি  করতে সাহায্য করে। 

আবার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখে শক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তের শূন্যতা দূর করে, ক্লান্তি ভাব দূর করতে বেশ কার্যকরী তাছাড়াও ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই বুট কিন্তু বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কিন্তু কলেস্টরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীরকে সুস্থ রাখে। তাই আপনারা যারা কাচা ছোলা বুট খেতে চান না তারা আজ থেকেই খাওয়ার একটি অভ্যাস করে নিন।

ছোলা খাবার পর ভুলেও যে খাবার টি।খাবেন না 

ছোলা একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এই ছোলা রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা। এর জন্য এই ছোলা খাওয়ার পর এমন কোন খাবার রয়েছে যে ওই খাবার গুলো খাওয়া একেবারেই যাবে না। খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে এখন কি এমন খাওয়া যেগুলো ছোলা খাওয়ার পর খাওয়া যাবেনা। আবার যেগুলো খাওয়ার আগে বা পরে ছোলা খাওয়া যাবেনা। তাই ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা র পাশাপাশি কোন খাবার খাওয়া যাবেনা ছোলা খাওয়ার পর। 

অনেকেই রয়েছে যারা সকাল বেলা ছোলা সিদ্ধ করে খায় অথবা রাতে ভিজিয়ে সকালে কাঁচা ছোলা খেয়ে ফেলেন এতে আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রোটিন পূরণ করে থাকে আমরা সবাই জানি। যারা ওজনও কমাতে চাচ্ছেন তারা কিন্তু ছোলা খেতে পারেন। ছোলা দিয়ে অনেক রকমের রেসিপি তৈরি হয়ে থাকে কিন্তু যদি আপনি রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে উঠে ওই ছোলাটা খান আরো বেশি উপকারী হয়ে থাকবে শরীর স্বাস্থ্যের জন্য। 

ছোলা খেয়ে যারা ওজন কমাতে চান তারা কখনোই তেলে দিয়ে বা মশল্লাতে দিয়ে ছোলা খাবেন না কারণ এতে আরো আপনার ওজন বাড়তে পারে। ছোলা খাওয়ার সময় কখনই কাঁচা লবণ সাথে ব্যবহার করে খাবেন না এতে আরো মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে। আপনার যদি কিডনি বা অন্য কোন শরীরে সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাবেন।

খালি পেটে ছোলা বুটের পানি খাওয়ার উপকারিতা 

প্রতিটি মানুষের শরীর এবং স্বাস্থ্য মূল্যবান। কিন্তু কি করবেন যখন অতিরিক্ত পরিমাণ খাবার খাওয়ার পরও শরীর স্বাস্থ্য হয় না। তাদের ক্ষেত্রে আমি বলবো তারা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে রাতে কিছুটা পরিমাণ ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে ওই পানি সকালে খায় তাহলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয়। আবার বাচ্চারা আছে যারা খেলাধুলা করে বা শরীর স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের ক্ষেত্রে ছোলা বুটের ছাতু বানিয়ে খাওয়াতে পারেন এতে করে দেহের শক্তি ফিরে আসবে। 
ছোলা বুট
অনেক দিনের যদি কফ জমে থাকে বা দাঁতের মাড়ি সমস্যা হয় তাহলে ছোলা বুট সিদ্ধ করে ওই পানি সাথে বাসক পাতার এক চা চামচ রস মিশিয়ে একটু পরিমাণ গরম করে কুলকুচি করতে পারেন। এতে করে দাঁতের মাড়ির যন্ত্রণা সহ সর্দি ভালো হবে। যারা বিভিন্ন ব্রণ ও মুখের মেছতা নিয়ে ভাবেন তারা ও কিন্তু এই ছোলা বুট দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে লাগাতে পারেন। 

তবে চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করবেন মুখে লাগানোর জন্য। তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে এক মোট পরিমাণ ছোলা বুট পানিতে ভিজে দিতে হবে। এরপর এটি সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পানিতে ভিজে রাখতে হবে। তারপর সেটি পানি থাকে ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে মুখে লাগাতে হবে। এই ভাবে আপনি ১ থেকে ১৫ দিন দেখতে পারেন লাগিয়ে। এছাড়াও যারা ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না তারা উপরের কিওয়ার্ড টি পড়ুন। 

ছোলা, বাদাম এবং কিসমিস একসাথে খাওয়া যাবে কি না

আমরা সবাই জানি ছোলা বুট এবং কিসমিস একটি পুষ্টিক খাবার। অনেকেই এই তিনটি খাবার একসাথে খেতে ভয় পায় আবার অনেকেই খেয়ে ফেলে। কিন্তু একসাথে খেলেও এটা খাওয়ার নিয়ম কি। যারা ছোলা বুট, বাদাম এবং কিসমিস একসাথে খেতে ভয় পান তারা নিঃসন্দেহে এই তিনটি খাবার একসাথে খেতে পারেন। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা কিসমিস টা একটু কম করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে করে আরো ডায়াবেটিস বাড়তে পারে। 
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা একটু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে চায় তাদের কিন্তু কিসমিস টাই একমাত্র তো নরমাল খাবারের মতো হয়ে থাকে এটি বেশি খাওয়া একেবারেই যাবে না। কিসমিস কার্বোহাইড এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হয়ে থাকে যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের একটি কম করে খাওয়া কথা বলে থাকে চিকিৎসকরা। এছাড়া বাদাম, ছোলা এগুলো খেতে পারেন। এই তিনটি খাবার যদি একসাথে কেউ খেতে পারেন তাহলে তার শরীরে একটি অন্যরকম পুষ্টি উৎপাদন তৈরি হবে। 

শরীরে থাকা যত ঘাটতি সবকিছুই পূরণ করতে সক্ষমতা বজায় রাখে এই তিনটি খাবার। এই তিনটি খাবার যদি সকালে খালি পেটে খান তাহলেই বেশি উপকার পেয়ে থাকবেন। আরো বেশি উপকার হয় যদি আপনি ছোলা, বাদাম অথবা কিসমিস যাই খান না কেনো যদি রাতে ভালো ভাবে ধুয়ে একটা পাত্রে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে এটি যদি সকালে খান আরো বেশি উপকার পেয়ে থাকবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি অথবা একটু পানি খেয়ে কিসমিস, ছোলা অর্থবা বাদাম যেকোনো খাবারই খেতে পারেন। 

লেখকের শেষ মন্তব্য   

ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর আপনার কতটুকু উপকার হয়েছে বলে মনে হয় সেটি নিচে মন্তব্য বক্সে জানাতে ভুলবেন না। তাছাড়াও আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে সেটিও কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখুন আমি যথার্থ সময়ে আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও আপনারা আরো কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন এটিও জানিয়ে রাখতে পারেন। 

আপনি চাইলে আপনার পরিচিত বন্ধুদের সাথেও এ কথা গুলো শেয়ার করতে পারেন। তারাও ছোলা বুট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবে। আপনারা যারা প্রতিদিন পোস্ট  পড়তে ভালোবাসেন তারা স্বপ্ন ছোয়া ওয়েবসাইটি ভিজিট করে রাখতে পারেন। কারণ এর ওয়েবসাইটের মূলত প্রতিদিন সঠিক তথ্যের উপর যাচাই-বাছাই করে পোস্ট আপডেট করা হয়ে থাকে। ধন্যবাদ এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য এবং আমার পাশে থাকার কারণ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url