চুই ঝাল রান্নার রেসিপি

চুই ঝাল এখন বাংলাদেশের অন্যতম একটি খাবার। কিন্তু আমরা অনেকেই আছি যারা এখনও চুই ঝাল  সঠিক নিয়মে রান্নার রেসিপি জানিনা। 
চুই ঝাল

যারা চুই ঝাল রান্নার রেসিপি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন মূলত তাদের জন্য আজকে আর্টিকেলটি। আজকের পোস্টে চুই ঝাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

.

চুই ঝাল খাওয়ার নিয়মাবলী 

চুই ঝাল বাংলাদেশের এখন অন্যতম এবং বিখ্যাত খাবার বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। চুই ঝাল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে খুলনা বিভাগে এখন এর চাহিদা এবং চাষ বেরেই চলেছে। চুই ঝাল যে কোন মুড়ির মসলা ব্যবহার থেকে শুরু করে গরুর মাংস দিয়ে রান্না করলে এর স্বাধ অতুলনীয় হয়ে থাকে। চুই ঝাল রান্নার পর চুষে অথবা চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে। 
চুই ঝাল হালিম রান্নাতেও ব্যবহার করা হয় থাকে। অনেক কৃষক সহ স্টুডেন্টরাও চুই ঝাল চাষ করে লাভবান হচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে আজকাল সোশ্যাল গুলো মিডিয়াতে। চিকিৎসকরা বলে থাকেন বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চুই ঝাল বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আম মেহগনি গাছের মতোই তুই চালের গাছ বেড়ে ওঠে এর পাতা গুলো দেখতে পান পাতার মতো হয়ে থাকে। 

চুই ঝালের দাম কত ২০২৪ সালে

খুলনার ঐতিহাসিক খাবার চুই ঝাল। চুই ঝাল কোথাও দেখলে খায়ানা, এমন হয় তো সংখ্যা কম রয়েছে। কারণ এটি স্বাদ এবং ঘ্রাণে অতুলনীয়। এছাড়াও চুই ঝাল রান্নার রেসিপি জানতে আপনাকে শেষ পর্যন্ত পরতে হবে। অনেকে বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমেও চুইঝাল বাড়িতে নিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকে বিভিন্ন মাংস বা ঝালমুড়ির মসলা বানানোর ক্ষেত্রে। কিন্তু আজকাল অনলাইনে যুগে অনেকেই প্রতারণার ও শিকার হয়ে থাকে। 

হয়তো দেখা যায় অনেকের টাকা মার যায় আবার বেশি দাম দিয়ে চুই ঝাল কেনা লাগে হয়তো। তাই ২০১৪ সালের চুই ঝালের সঠিক দামটি জানতে বিস্তারিত পড়তে থাকুন। চুই ঝালের দাম মূলত যত চিকন তত দাম কম যত মোটা তত দাম বেশি তবে স্বাভাবিক অথবা মাঝারি সাইজ যেগুলো সেগুলো ১০০ থেকে ১২০ টাকা হয়ে থাকে। তবে চিকন গুলোর থেকে মোটা গুলোই খেতে বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে। কারণ মোটা গুলোতে একটু সার এবং ঝাজ বেশি রয়েছে। 

একেবারে চিকন যেই চুই ঝালটা ওটা সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। মাঝারি সাইজের যে চুই ঝাল ওইটা ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা কেজি পরে থাকে। বড় সাইজের যেই চুই ঝালটা ওইটা সর্বনিম্ন ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা হয়ে থাকে। আশা করছি এই দাম গুলো জানার পর আপনারা পরবর্তীতে আর প্রতারিত হবেন না। চুই ঝাল কিন্তু বেশি লাগে না ১০০ গ্রাম হলেও রান্না করা যে থাকে মাংসের সাথে। মাটির নিচের অংশ চুই ঝাল গুলোই বেশি টেস্টি হয় খেতে। 

চুই ঝাাল খেলে কি উপকার পাওয়া যায়

দক্ষিণ-পশ্চিমা অঞ্চলে চুই ঝাল মাংস দিয়ে বেশি রান্না করে থাকে। তারা তো মাংসতে চুই ঝাল ছাড়া রান্না করার কথা ভাবতেই পারেনা। যখনই মাংস তখনি চুই ঝাল। এই চুই ঝাল একটি ঝাল ঝাল ফ্লেবার এসে থাকে যেটি মুখের রুচি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে। চুই ঝাল পাতা থেকে শুরু করে কান্ড মূল সবকিছুতেই একটি পুষ্টিগুণ রয়েছে। 

চুই ঝাল শুধু খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে না চুই ঝাল গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। চুই ঝাল খেলে ভালো ঘুমও হয়ে থাকে। তাছাড়াও চুই ঝাল খেলে শরীরের যে কোন ব্যথা কমাতে সাহায্য করার পাশা পাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়তা করে থাকে। 

আবার চুই ঝাল খেলে দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রাটাও কমে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ভেজানো গুণ রয়েছে এই চুইঝালে। অনেকেই আছে যারা চুই ঝাল রান্নার রেসিপি টা জানে না তাই তারা চুই ঝাল খাওয়ার শখ থাকলেও খায় না, বাড়িতে নিয়ে এসে। তাই তারাও কীভাবে বাড়িতেই রান্না করে খাবেন চুইঝাল সেই রেসিপিটি জানতে বিস্তারিত পরতে থাকুন। 

চুই ঝালের চারা কোথায় পাওয়া যেতে পারে 

চুই ঝাল অনেকেই বাড়িতে রান্না করে খেয়ে থাকে। কিন্তু চুই ঝালের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই চায় চারা কিনে ছাদে অথবা বাগানে বা বাড়ির আশেপাশে চুই ঝালের চারা করতে। তারা কিভাবে চুই ঝালের চারা করবেন এবং চুই ঝালের চারা কোথায় পাওয়া যেতে পারে তারা পড়তে থাকুন। দেশি চুই ঝালের গাছ গুলো মোটা হতে ছয় থেকে সাত বছর সময় লেগে থাকে। 

অরজিনাল চুই ঝাল চারা পেতে হলে আপনি কুরিয়ারের মাধ্যমে ছাড়া বাদে আপনি নিজে যেয়ে দেখে শুনে নিলে আসলে এতেই বেশি ভালো হতে পারে। কারণ চুই ঝাল তিন থেকে চার রকমের হয়ে থাকে। তাই আপনাকে কোনটা দিচ্ছে সেটি বুঝার জন্য পরিচিত কাউকে নিয়ে যাবেন যে চুই ঝাল সম্পর্কে একটু বেশিই জানে। মাটির নিচে যে চুই ঝাল চাষ করা হয়ে থাকে ওটাকে গেটে চুই ঝাল বলা হয়ে থাকে এবং মাটির উপরের যেই চুই টা চাষ করা হয়ে থাকে সেটাকে গাঁছা চুই বলা হয়ে থাকে। 

চুই ঝালের চারা আপনি বাড়ির আশেপাশে নার্সারি গুলোতেই পেতে পারেন কারণ আজকাল এই চুই চারা সারা বিশ্বের কম বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। যদি আপনি কখনো রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, পাহাড়ি অঞ্চল, দক্ষিণ, পশ্চিম অঞ্চল যে থাকেন ওখান থেকেই চুইয়ের চারা নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন এতেই আরও বেশি ভালো হয়ে থাকে।  

চুই ঝাল রান্নার রেসিপি 

চুইই ঝাল আমরা অনেকেই খেতে চাই কিন্তু রান্নার কারণে খেতে পারিনা এটি একটি নতুন খাবার। যার কারনে অনেকেই খাওয়ার স্বাদ থাকলেও রান্নার সাহস পায়ইনা। তাই তারা এই কিওয়াড টি পড়তে থাকুন শেষ পর্যন্ত। আমরা জানি চুই ঝাল অনেক কিছু দিয়ে রান্না করে খাওয়া যে থাকে তার মধ্যে একটি হচ্ছে গরুর মাংস এবং বেশির ভাগ যে কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে সেটি হল মুড়ির মসলা বানানোর ক্ষেত্রে। 
তাই আমি এখন মুড়ি মসলার সাথে কিভাবে চুই ঝাল রানবেন সেটি এখন বলতে যাচ্ছি। এছাড়াও নিচের কিওয়ার্ডে আপনি গরুর মাংসের সাথে কিভাবে চুই ঝাল রান্না করবেন সেই রেসিপিটি লেখা আছে। চুই ঝাল দিয়ে মুড়ির মসলার বানানোর সব থেকে সহজ কারণ হচ্ছে আপনি একটি পাত্রে কিছুটা পরিমাণ আস্ত গোটা রসুন এবং আদা বাটা নিয়ে নিন এরপর সেখানে কিছু টা পরিমাণ হলুদ, লবন, মরিচের গুঁড়ো, গরম মসলা গুড়ো, 

চটপটির মসলা, ধনিয়া গুড়ো, জিরা গুড়ো তারপর এটি অল্প কিছু পানি নিয়ে পেস্ট করে নিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। ১০ মিনিট হয়ে গেলে চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে দিন। সেখানে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কিছুটা সরিষার তেল দিয়ে দিন। তবে সয়াবিন অথবা সরিষা দুটোই ব্যবহার করতে পারে। তেল গরম করার পর সেখানে কিছুটা পরিমান পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা এবং আদা বাটা দিয়ে দিন। 

তারপর মসলা গুলো একটু পরিমাণ ভেজে নিন ভাজা হয়ে গেলে আগে থেকে মসলার পেস্ট টা দিয়ে দিন। তারপর আবার কিছুটা পরিমাণ কষানো হয়ে গেলে আগে থেকে কেটে রাখা চুই ঝাল এবং আস্ত গোটা রসুন গুলো দিয়ে দিন  তারপর সেগুলো আবার ভালোভাবে কষিয়ে নিয়ে একটু পরিমাণ পানি অ্যাড করে রেখে দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। তারপর ব্যাস তৈরি হয়ে গেল চুই ঝাল দিয়ে মুড়ির মসলা। এই ভাবে আপনারা বাড়িতে বানিয়ে টেস্ট করে দেখতে পারেন।

গরুর মাংস দিয়ে চুই ঝাল রান্নার রেসিপি 

চুই ঝাল এখন বাংলাদেশের সব জায়গাতেই মোটামুটি বিখ্যাত খাবার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম এবং খুলনা।  তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক গরুর মাংস দিয়ে কিভাবে চুই ঝাল রান্নার রেসিপি তৈরি করবেন। প্রথমে আমরা দুই থেকে তিনটা অথবা এক থেকে ১৫০ গ্রামের মতো চুই ঝাল নিয়ে নিব। তারপর এটি ভালোভাবে উপরের বাকলা টা ছাড়িয়ে নিব। 

ছাড়িয়ে নেওয়া হয়ে গেলে ছোট ছোট করে পিচ করে নিব। চুই ঝালের ডালটা কিন্তু যত পুরোনো হবে অথবা মোটা হবে তত কিন্তু খেতে সুস্বাদু বেশি। তবে বেশি চুই ঝাল টা ছোট ছোট পিস বা চিকন পিস করবেন না একটু মোটা মোটা করে পিচটা করে নিবেন। নয়তো মাংসের সাথে রান্না করতে গলে যাবে। তারপর চুই ঝাল গুলো ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। তারপর কিছুটা আস্ত গোটা গোটা রসুন নিয়ে নিন। কিন্তু রসুনের কোয়া খুলবেন না। 
চুই ঝাল
তারপর রসুনটা ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। আরেকটি পাত্রে গরুর মাংস ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। তারপর একটা পাত্রে গরুর মাংস নিয়ে নিন এবং সাথে কিছুটা পরিমাণ হলুদ, লবণ, মরিচের গুঁড়ো, ধনিয়া গুড়া, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, সাদা এলার্চ, দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, কাঁচা পিঁয়াজ কুচি, তেল দিয়ে মাংসটা ভালোভাবে মাকিয়ে নিন। মাখানো হয়ে গেলে কিছুটা পরিমাণ পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভালো ভাবে কষিয়ে মাংসটা সিদ্ধ করে নিন। 

কসানো হয়ে গেলে আগে থেকে কেটে রাখা চুই ঝাল গুলো দিয়ে ভালো ভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আবার কষিয়ে নিন। ১৫ মিনিট হয়ে গেলে তার পর আবার আগে থেকে আস্ত গোটা রসুনগুলো দিয়ে দিন তার সাথে কিছুটা পরিমাণ গরম মসলা গুড়ো অ্যাড করুন। এতে করে একটা ভালো ফ্লেভার আসবে। এরপরে আবার আপনারা ৫ কষিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে দিন। তারপর আবার ১০ থেকে ২০ মিনিট পর হয়ে গেলে পরিবেশন করে নিন। তারপর এক চা চামচ জিরা গুঁড়া উপরে দিয়ে দিন। 

লেখকের শেষ মন্তব্য 

আপনারা যারা চুই ঝাল রান্নার রেসিপি সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি জানতে চাচ্ছিলেন আশা করছি এ পোস্টে পরার পর যদি আপনারা এই নিয়মেই চুই ঝাল এবং গরুর মাংস রান্না করে খেয়ে থাকেন তাহলে রান্নাটা অসাধারণ হবে। আপনারা কিন্তু এই নিয়মের রান্না করে অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। 

চুইঝাল সম্পর্কের রান্নার রেসিপি টা পড়ে আপনার কেমন লেগেছে এটি মন্তব্য বক্সের জানিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য এবং আমার পাশে থাকার জন্য।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url