শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা

পানির অপর নাম জীবন এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু পানি খাওয়ার কতটা উপকারী এবং পানি খেলে কি শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি এটা আমরা তেমন কেউই জানি না। 
পানির প্রয়োজনীয়তা
দিনে কত টুকু পানি খেলে শরীর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। পানি খেলে কি কি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেয়ে থাকে এবং শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয় সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। 

.

সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করার উপকারিতা 

পানি ছাড়া যেন জীবন অচল। কোন কাজ থেকে আসার পর বা কোন কিছু খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি খেলে যেন জীবনটা ঠান্ডা হয়ে যায়। তবে পানি খেলেও পানি খাওয়ার মধ্যে ভাগ রয়েছে। পানি খেলে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যেয়ে থাকে যদি আপনি সকালে পানি পান করেন তাও আবার খালি পেটে। 
সকালে খালি পেটে পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন গুলো বের করে রক্ত পরিষ্কার করতে এবং শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে তাছাড়া ও ভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি খেলে হজমের প্রতিক্রিয়া পুনরায় আবার সচল হয়ে থাকে। 

এতে করে পরবর্তীতে যে খাবারই খান না কেন হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে  তাড়াতাড়ি। তাছাড়া ও পানি শরীর স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন রোগ ব্যাধি সরাতে সাহায্য করে থাকে যেমন কিডনিকে ভালো রাখতে পানি প্রচুর সহযোগিতা করে থাকে। রক্তের দূষিত পদার্থ গুলো শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে থাকে। 

বেশি পরিমাণ পানি পান করার উপকারিতা 

সাধারণত অনেকের ক্ষেত্রে বা বেশির ভাগ মানুষজনেরই ক্ষেত্রে দেখা যে থাকে তৃষ্ণা লাগলেই পানি খেয়ে থাকে কিন্তু এছাড়া ও যে এমনি পানি খাওয়া কতটা উপকারী সেটা আমরা জানি না। আপনি নিয়মিত বেশি পরিমাণ করে পানি পান করার চেষ্টা করবেন। পানি কিনতে তো আর টাকা লাগে না তাই যত পারেন পানি খাবেন বেশি বেশি করে। বিশেষ করে গরমের সময়। একটি সুস্থ মানুষের প্রতি নিয়ত দৈনিক দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 

তবে যারা বেশি ক্লান্তিকর কাজ করে থাকেন বা রোদের বেশি কাজ করে থাকেন তাদের চার থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করলেই শরীর স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী হবে। যত বেশি পানি পান করতে পারবেন ততই আপনার শরীর স্বাস্থ্য দুটোই সুস্থ থাকবে। তবে পানি খাওয়ার অনেক নিয়মাবলী আছে। অনেকে মনে করে তৃষ্ণা পেল পানি খেয়ে নিলাম বা পানি এখন খেতে মন চাচ্ছে খেয়ে নিলাম ভুল করে ও এই এই কাজটি কখনোই করা যাবে না। তাছাড়া অনেক খাবারই রয়েছে যেগুলো পানির মধ্যে পরে। 

যেমন চা, দুধ, সুপ ইত্যাদি। আপনি চাইলে প্রতিদিন খাবারের তালিকায় এগুলো রাখতে পারেন পানি হিসেবে। শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। যেমন অতিরিক্ত পরিমাণ পানি খেলে কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে তাছাড়াও শরীরের মধ্যে যে পানির ঘাটতিটা ওইটা পূরণ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন বিশুদ্ধ এবং ফ্রেশ পানি খাওয়ার।

বয়স অনুযায়ী কত লিটার পানি পান করা উচিত 

উপরের কীওয়ার্ডে আমি শুরুতেই বলে এসেছি পানি খাওয়ার নিয়মাবলী রয়েছে। যেমন বাহিরে কোথাও থেকে ঘরে এসেই পানি খাওয়া যাবে না। সর্বনিম্ন তিন থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি পান করতে হবে। বাহির থেকে এসেই মুখ হাত ধোয়া যাবে না। 

ঘরে এসে ঘরের স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা ওইটার একজাস্ট করে নেয়ার পরে পানি পান করা উচিত। বাহির থেকে এসেই গোসল করা যাবে না। তাছাড়া ও শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত আরো ও নিচে জানতে হবে। তবে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক বয়স অনুযায়ী কত লিটার পানি পান করা উচিত আমাদের।
  • সুস্থ্য সবল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের প্রতিনিয়ত দৈনিক চার থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 
  • বেশি পরিমাণ পরিশ্রমে লোকদের অর্থাৎ রোদের তাপমাত্রায় যারা কাজ করে থাকে বা  মাঠে ঘাটে কাজ করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় লিটার পানি পান করা উচিত কারণ তাপমাত্রার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ ঘাম ঝরে যায়। 
  • স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যারা বাড়িতে থাকে তাদের দৈনিক দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 
  • ৫ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের দৈনিক হাপ থেকে এক লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 
  • ১০ থেকে ২০ বছর বয়সে ছেলে মেয়েদের দৈনিক এক থেকে দেড় লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 
  • ২০ থেকে ৩০ বছর মানুষ জনের দৈনিক দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 

অতিরিক্ত পরিমাণ পানি খেলে কি ক্ষতি হতে পারে

অতিরিক্ত পরিমাণ পানি পান করলে শরীরে ঘটতে পারে কিছু সমস্যা। পানি পান করলে ও আপনার দৈনিক কত লিটার পানি পান করা উচিত সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পরেই পানি পান করা উচিত। বেশি পরিমাণ পানি পান করলে শরীরে ক্লান্তির মত উপসর্গ এবং মাথা ব্যাথা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পানি খেলেই যে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকবে সুস্থ থাকবে বিষয়টি কিন্তু এমনও নয় শুধু বলা হয়েছে শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পানির প্রয়োজন। 
অনেক অসুকের ক্ষেত্রে পানি খাওয়া বারণ করা হয়ে থাকে যেমন কিডনি ভালো রাখতে পানি বেশ উপকার করে থাকে ঠিক তেমনি কিডনির সমস্যা হলে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন ডাক্তারেরা। আবার অনেক অসুকের ক্ষেত্রেও পানি খাওয়ার কম বেশি ভাগ রয়েছে। যেমন গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে পানি পান করা অনেকটা প্রয়োজন। তাই পানি খেলেও আপনার শরীর স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে তারপরে পানি খাবেন। এতে করেই আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকতে পারে। 

পানি খাওয়ার কতক্ষণ পর আবার পানি পান করা উচিত 

পানি পান করলে ও পানি খাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক ভাগ। পানি একটি প্রয়োজনীয় খাবারের মধ্যেই হয়ে থাকে। তবে ভাত খাওয়ার কতক্ষণ পর পানি খাওয়া উচিত এটা আমরা হয়তো অনেকেই জানি না। ভাত খাওয়ার ৩০ মিনিট পর পানি খেতে পারেন, পরবর্তীতে ১ ঘন্টা পর, তারপরে দুই ঘন্টা পর, শেষবারে তিন ঘণ্টা পর, এই ভাবে আপনারা যে ঘন্টা তে পানিটা খাবেন ওই ভাবে ওই ঘন্টা যোগ করে পরবর্তী ঘন্টাতে পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

যেই ৩ টি খাবারের পর কখনো পানি খাবেন না 

আমরা না বুঝে না জেনে অনেক খাবারে পর পানি খেয়ে ফেলি। কিন্তু এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়ার পর পানি একেবারে খাওয়া ঠিক নয়। এতে আরও বিভিন্ন ধরনের আসো বাসা বাঁধতে পারে। আপনি যদি শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানি প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে বিস্তারিত মনোযোগ সহকারে পোস্ট পরতে থাকুন শেষ পর্যন্ত তাছাড়া এখন আমরা জানবো কোন খাবার গুলো খাওয়ার পর পানি খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। তবে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 
  1. ফলমূল: যেকোনো ফল খাওয়ার পর পানি খেলে বদ হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে টক জাতীয় ফল গুলো খাওয়ার পর তো একেবারেই পানি খাওয়া যাবে না। যেমন তেতুল, আনারস, আমলকি। কিছু গবেষণায় দেখে গিয়েছে তেঁতুল খাওয়ার পর যদি কেউ পানি খেয়ে ফেলে তাহলে রক্ত পানি হয়ে যায়। 
  2. কুমোল পানি: যেমন ডিংক্স, আইসক্রিম, কোকোলা ইত্যাদি। আইসক্রিম খাওয়ার পর পানি একেবারে খাওয়া যাবে না কারণ ঠান্ডা পানি এবং স্বাভাবিক পানির মধ্যে অনেক তফাত রয়েছে। আপনি যদি আইসক্রিম খাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি খান তাহলে ঠান্ডা গরম লেগে গলা ব্যথা শুরু হতে পারে এবং গায়ে জ্বর ও আসতে পারে। 
  3. মসলা যুক্ত খাবার: মুখরোচক খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে। বেশি পরিমাণ মসলাযুক্ত খাবার খেলে হজম হতে অনেক সময় লাগবে। তাই আপনারা চেষ্টা করবেন বেশি কোন মসলা যুক্ত খাবার রান্না করে না খাওয়া। 

শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা 

পানি ছাড়া যেন আমরা অনেকেই অচল। পানি আল্লাহতালার নিয়ামত বলে আমরা জেনে থাকি। আপনি যদি পানি এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে পড়ে আসেন তাহলে আমি বলব যদি ওই নিয়মেই পানি খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি করতেও পানি বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এতে করে আপনার কোন ডাক্তারের কাছে বা ওজন বৃদ্ধি করার জন্য কোন ওষুধ খেতে হবে না আপনি কিন্তু ঘরোয়া উপায়েও ওজন বৃদ্ধি করতে পারেন। 
পানির প্রয়োজনীয়তা
তবে পানি কম এবং বেশি কোনটাই খাওয়া যাবে না। কারণ পানি কম খেলে কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে আবার পানি বেশি খেলে শরীরের অনেক অসুখী দেখা দিতে পারে তাই আমাদের সব সময় পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খাওয়া উচিত। পানি ছাড়া সকল জীব সহ জন্তু অচল। প্রতিটি মানবদেহে পানি বিশেষ ভূমিকা রাখে। পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম যা হয়তো বলে ও শেষ হবে না। 

লেখকের শেষ মন্তব্য 

শরীর স্বাস্থ্যের জন্য পানি প্রয়োজনীয়তা কেনো সেটা হয়তো আমরা উপরের কিওয়ার্ড গুলো পড়ে জানতে পেরেছি। আপনারা সব সময় চেষ্টা করবেন বয়স এবং স্বাস্থ্য অনুযায়ী দৈনিক নিয়মিত পানি পান করা। গরমের সময় বেশি বেশি করে পানি পান করার চেষ্টা করুন এবং শীতের সময় হালকা উশু গরম করে পানি খেতে পারেন তবে স্বাভাবিক পানি খেলে কোন সমস্যা নেই। 

আশা করছি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন এবং অনেক বিষয়ব সম্পর্কেই জানতে পেরেছেন। যেমন কোন খাবারের পর পানি খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীর স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতি হতে পারে।  বেশি পরিমাণ পানি পান করার উপকারিতা এছাড়াও বয়স অনুযায়ী কত লিটার পানি পান করা উচিত আমাদের এসব উপরের কীওয়ার্ড গুলোতে আমি আলোচনা করে এসেছি। 

এই পোস্ট টি পড়ে আপনাদের পানি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হয়তো কোন প্রশ্ন নেই আর মনে। আপনি চাইলে আপনার পরিচিত বন্ধু এবং মা-বাবাকে আত্মীয় সুজনসহ সবার সাথেই কথা গুলো শেয়ার করতে পারেন। তারাও জানতে পারবে দৈনিক কত টুকু পরিমাণ পানি পান করা তাদের ও। আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে নিচে মন্তব্য করতে পারেন। ধন্যবাদ এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য এবং আমার পাশে থাকার জন্য। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url