নবজাতক শিশুর যে ২০ টি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি
নবজাতক শিশুর প্রতি আমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কারণ আমরা বড়রা যেভাবে যে কোন জিনিসের সাথে কমপেটেনল করবো ছোটরা এবং শিশুরা ওইভাবে কমপেটেবল করে না।
এছাড়াও আমাদেরই যে ভুলের কারণে শিশুদের পড়তে হয় সমস্যায়। নবজাতক শিশুর যে ২০ টি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে জেনে নেয়া যাক চলুন।
.
নবজাতক শিশুর জন্মের পর করণীয় কি
প্রতিটি মায়েরই যেন একটি সন্তান হলে পৃথিবীর সব থেকে বড় উপহার যেন পেয়ে যায়। পেটে থাকা অবস্থায় এবং হওয়ার সময় কষ্ট হলেও সন্তানের মুখ একবার দেখলেই মায়ের আত্মাটা যেন জুড়ে যায়। নবজাতক শিশু হলে আমাদের প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হল শিশুটিকে ভালো ভাবে মুছে শোষণ করা অর্থাৎ পরিষ্কার করা। পরবর্তীতে এইটা খেয়াল রাখতে হবে যে বাচ্চাটা কাদছে কিনা। তারপরে চেষ্টা করবেন গরম জায়গায় রাখা।
আরও পড়ুন : পেপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গরম রাখা বলতে মায়ের গায়ের সাথে গা লাগিয়ে রাখা অর্থাৎ মায়ের কোলে রাখা। বাচ্চাটিকে একটা তোওয়ালা দিয়ে হাত পা সহ মাথা ভালো ভাবে ঢেকে মায়ের কোলে রাখতে হবে। বাচ্চাটি যদি স্বাভাবিক ভাবেই নিশ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে থাকে তাহলে বাচ্চার নাভিটি ভালো ভাবে বাঁধবো। পরবর্তীতে বাচ্চাটির ওজন মেপে দেখব বাচ্চাটি স্বাভাবিক মাত্রায় ওজন হয়েছে কি হয়নি।
ছেলে সন্তান জন্মের পর পরিবারের করণীয় কি
প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব একটি নবজাতক শিশু হলে তার যন্ত্র নেওয়া। তবে যত্ন নিলেই যে শুধু হবে তা নয় একটি শিশু হলে তাকে ইসলামিক অনুসারে অনেক কিছু পালন করানো হাদিসে রয়েছে। যেমন ছেলে সন্তান জন্মের পর প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব সেই সন্তানটিকে নিয়ে অথবা সেই সন্তানটি কানে আযানের সন্ধি শোনানো । পরবর্তীতে সে সন্তানটিকে পরিষ্কার তুয়ালা দিয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নেওয়া এবং মায়ের মাতৃত্ব দুধ পান করানো।
সন্তান জন্মের পর মায়ের কি খাবার খাওয়া উচিত
বাচ্চা জন্মের পর কি খাবার মাকে খাওয়ানো উচিত সেই সম্পর্কে অনেকেই জানে আবার জানে না। তাই যারা জানেনা মূলত তাদের জন্য আজকে এই কিওয়ার্ড টি। এটি পড়লে জানতে পায়না সন্তান জন্মের পর মায়ের কি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যে থাকে যে বাচ্চার জন্মের পর বাচ্চা খাওয়া নেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যেটি করা ঠিক আবার ভুল। বাচ্চার জন্মের সময় পরিবারের হয়তো দুই থেকে তিনজন আসে গর্ভবতী মায়ের সাথে।
তখন শুধু বাচ্চার জন্মের পর বাচ্চাটিকে নিয়ে শুধু ব্যস্ত হলে হবে না। মায়ের দিকেও নজর দিতে হবে। একজন যদি বাচ্চার খাওয়া নিয়ে বাঁচতে হয় অন্যজন গর্ভবতী মায়ের খাওয়া নিয়ে বাস্ত হতে হবে। হয়তো শিশুটির দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকে যখন বুকের দুধ পায়না ঐই শিশু। কিন্তু আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে যে যে উৎস থেকে শিশুটি দুধ পাবে তাকেই আগে ভিটামিন জাতীয় খাবার খাদ্য গ্রহণ করাতে হবে।
প্রতিটি নবজাতক শিশু জন্মের পর মায়েদের খাদ্য তালিকায় এক অংশে প্রোটিন আরেক অংশে কার্বোহাইড্রেট এবং আরেক অংশে ফাইবার বা ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। তার মধ্যে ছোট মাছ অথবা বড় মাছ, মুরগির মাংস অথবা গরুর মাংস, মোটর, মোগ ডাল অথবা যে কোন ডাল, ডিম খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
আপনারা চাইলে ভাত এবং রুটিও দিতে পারেন খাদ্য তালিকা। আবার কার্বোহাইড্রেট খাবারের তালিকায় সবুজ এবং লাল, কালো জাতীয় ফল যেমন আপেল, কমলা, আঙ্গুর, জাম, ড্রাগন ইত্যাদি। মালটা, আমলকি, জলপাই এগুলো খাওয়াতে পারেন। এতে করে যদি সিজার করে নবজাতক শিশু হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত ঘা শুকিয়ে আসবে।
শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময় যেই খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা
প্রতিটি শিশুর জন্মের পর গর্ভবতী মাকে বেশি তৈলাক্ত খাবার অথবা ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়ানো যাবে না এছাড়াও কালো জাতীয় কোন খাবার যেমন কোক অথবা ড্রিংক একেবারেই খাওয়া যাবে না। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক জাতীয় কোন খাবার দেওয়া একেবারেই যাবে না। যেটি মায়ের থেকে শিশুর ও হতে পারে। এছাড়াও ফাস্টফুড খাবার দেওয়া যাবে না।
গর্ভবতী মা কি খেলে বুকের দুধ বাড়ে
গর্ভবতী মায়ের যে খাবারগুলো খেলে বুকের দুধ বাড়ে তা হচ্ছে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণ ভিটামিন এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন পেয়ারা, আপেল, কমলা, বেদনা, ড্রাগন, মালটা, আঙ্গুর, জাম, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ডাল, ছোট মাছ, ডিম, দুধ, আমলকি ইত্যাদি।
এই খাবারে কিন্তু প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ভিটামিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ ভিটামিন বি ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই রয়েছে। যার কারণে এই খাবারগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কম বেশি রাখলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি শিশুর শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
নবজাতক শিশু যে ২০ টি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি
নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে আমরা যেই ভুল গুলো বেশি ভাগ ক্ষেত্রে করে থাকি তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানিনা। এজন্য আমাদের প্রতিটি নবজাতক শিশুর প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন তার মধ্যে ২০ টি বিষয় হচ্ছে
- শিশু ঘুমের অবস্থায় থাকলেও তাকে দুগ্ধ পান করাতে হবে।
- দুধ পান করানোর সময় অবশ্যই মাথাটি সোজা করে নিতে হবে।
- বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো যাবে না।
- দুধের পরিমাণ কম হয়ে থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
- বাচ্চার দুধ খেয়ে পেট না ভরলে বারতি ফিটার খাওয়াতে হবে।
- নবজাতক শিশুর যেকোনো সমস্যায় দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
- বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর ডেকুস শুটানোর চেষ্টা করবেন এতে করে ভেতরে থাকা গ্যাস বের হয়ে যাবে।
- ছয় মাসের আগে বাচ্চাকে বাসানোর চেষ্টা করবেন না।
- বাচ্চাদের বেশি জোরে নাড়াচাড়া করবেন না এতে করে বাচ্চার হারগুলো ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
- বাচ্চাকে ধরার আগে অথবা কোলে নেওয়ার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিবেন।
- নাভি শোকানোর জন্য যদি ডাক্তারের কোন পাউডার বা ওষুধ দিয়ে থাকেন তবে আপনি ব্যবহার করবেন নয়তো কে কিনে এনে ব্যবহার করবেন না।
- নাভিতে যেন কোন পানি না ঠেকে কোন সময়ের জন্য এতে করে ওখানে কিন্তু পেকে যে পুজ হতে পারে এতে আরো বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
- নাভি শুকানোর পর বাচ্চাকে গোসল করাবেন।
- নাভি শুকানোর পর গোসল করাতে হলে শিশুকে গরমের সময় একবার শীতের সময় দুই দিন পর একবার গোসল করাতে হবে তবে শীতের সময় প্রতিদিন গোসল করালেও পানি অবশ্যই আগে থেকে রোদে দিয়ে রাখতে হবে।
- বাচ্চা বাড়তি খাবার শিখলে অবশ্যই খাবারে কোন তেল ব্যবহার করবেন না। পেটে বাচ্চার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে তাছাড়াও গর্ভবতী মায়ের ও তৈলাক তো খাবার খাওয়াই উচিত।
- গোসল করানোর সময় বাচ্চার মাথাটা উপরে ভালোভাবে ধরিয়ে তবেই গোসল করাবেন লক্ষ্য রাখবেন যেন বাচ্চার কানে পানি না যায়।
- শীতের সময় দিনের মধ্যে দুই থেকে তিনবার বাচ্চার গায়ে সরিষার তেল মালিশ করবেন পুরো শরীরে।
- বাচ্চার গায়ে যে কোন তেল মাখানোর আগে অবশ্যই তেলটুকু গরম করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন এতে বাচ্চার কোন অসুখ-বিসুখ হবে না।
- নবজাতক শিশুকে কখনোই পলেস্টার অথবা জর্জেট কাপড় পরাবেন না অবশ্যই সুতির কাপড় পরিধান করাবেন।
- বাচ্চা ঘুমালে কানের কাছে জোরে চিৎকার অথবা আওয়াজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নবজাতক শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম
প্রতিটি নবজাতক শিশুকে দুধ পান করানোর সময় ধীরে ধীরে পান করানো উচিত এবং কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চাকে দুধ পান করাতে হবে। এতে করে বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি হবে। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় অবশ্যই কোলে করে নিয়ে খাওয়াবেন এতে করে হজম হবে।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পর আনারস খাওয়া যাবে কিনা
প্রতিটি নবজাতক শিশু জন্মের পর যেই ভুলগুলো করে থাকে অনেকেই তা হচ্ছে দুধ খাওয়ানোর পর আনারস খায় নয়তো আনারস খাওয়ার পর বাচ্চাকে দুধ খাওয়াই যেটি করা একেবারেই ভুল কাজ। এটি করলে আরো শিশুর ক্ষতি হতে পারে। কারণ আনারস খাওয়ার পর বাচ্চা দুধ খাওয়াতে বারণ করেন ডাক্তারেরা।
আরও পড়ুন : ছোলা বুট পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
হয়তো আপনি এটা ভেবে খেলেন যে এখন খেয়ে একটু পরে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবো কিন্তু একটি নবজাতক শিশুকে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে দুধ খাওয়ানোর কথা বলে থাকে ডাক্তারেরা। সেখানে তাহলে আপনি কি করে আনারস খাওয়ার পরে শিশুকে দুধ খাওয়াবেন। আনারস খাওয়ার পর ডাক্তারেরা সাধারণত ২ থেকে ৪ ঘন্টা পর দুধ পান করার কথা বলে থাকে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা' নবজাতক শিশুর যে ২০ টি বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি এটি জেনে আপনাদের কেমন লেগেছে অথবা আপনাদের কতটা কাজে এসেছে সেটি কমেন্ট বক্সে জানিয়ে রাখুন। এছাড়াও যদি আপনার আরো কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে সেটিও বলতে পারেন। আপনার যদি এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে স্বপ্ন ছোঁয়া ওয়েবসাইটি ভিজিট করুন।
এছাড়াও স্বপ্ন ছোঁয়া ওয়েবসাইটে নিত্যনতুন পোস্ট পরতে নিয়মিত আসতে পারেন কারণ স্বপ্ন ছোঁয়া ওয়েবসাইটে প্রতিদিন পোস্ট আপডেট করা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে আপনার পরিচিত এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও কথা গুলো শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য এবং আমার পাশে থাকার জন্য।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url